Loader
শিক্ষা, শান্তি, সেবা ও সামাজিক উন্নয়নই নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশন-এরমূল লক্ষ্য। পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও পরোপকার-এর মাধ্যমে বিশ্বমানবতার কল্যাণই আমাদের একমাত্র ব্রত। আর্তমানবতার সেবা, সমাজ সংস্কার, কর্মসংস্থান তৈরি, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, এতিম, গরিব, বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের ভরণপোষণ, ছিন্নমূল ও পথবাসীদের পুনর্বাসন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানসহ সব শ্রেণির নাগরিকদের নৈতিক ও চারিত্রিক উন্নয়নের মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি আমরা।

ইসলামিক কল সেন্টার


ইসলাম ও জীবনভিত্তিক যে কোনো প্রশ্নের উত্তর জানতে নিচের লাইভ চ্যাটবক্স ব্যবহার করুন। আপনি চাইলে আমাদেরকে ই-মেইলও করতে পারেন। ই-মেইল ঠিকানা : nurulislamfoundation.org@gmail.com
অথবা প্রশ্ন করার ফরমটি পূরন করে প্রশ্ন করতে পারেন যা আমাদের প্রশ্নউত্তর আর্কাইভে সংরক্ষিত থাকবে এবং পরবর্তিতে অন্যদের কাজে লাগবে।

প্রশ্ন উত্তর আর্কাইভ


প্রশ্ন শিরিক এর- কল্পনা থেকে বাঁচার উপায় কী?

উত্তরঃ কখনো কখনো শয়তান মানুষকে শিরকি কল্পনায় ডুবিয়ে দেয়। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, নবী করিম সা. এরশাদ করেন,শয়তান বলে, এটা কে সৃষ্টি করেছে? অতঃপর তাকে কে সৃষ্টি করেছে? এমন কি বলে, তোমাদের প্রভুকে কে সৃষ্টি করেছে? আল্লাহর রাসুল সা. এরূপ কল্পনা মনে আসলে তা থেকে উত্তরণের পথ বলে দিয়েছেন। তা হচ্ছে,"আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম"।এটা পড়া এবং শিরকি কল্পনা থেকে নিজেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা। এটা আমাদের জন্যই শিরকি কল্পনা থেকে বাঁচার ওষুধ। বিশেষভাবে যখনই মনের মাঝে কোন কুফরি ও শিরকি কথা আসবে আউযুবিল্লাহ পড়বো। নিজেকে সবসময় এই ভ্রান্ত কল্পনা থেকে দূরে রাখবো। শয়তানি কুমন্ত্রণার দিকে মনোযোগী হবো না। এছাড়া সব সময় পবিত্র অবস্থায় থাকবো এবং নামাজ গুরুত্ব সহকারে পড়বো। এটা পরম সত্য যারা নামাজের গুরুত্ব দেয় না, তারা পবিত্রতার প্রতি মনোযোগী কম হয়। মনে রাখবেন, শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। নাপাকি অবস্থায় থাকা মানুষদেরকে বেশি বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে শয়তান। তাই সব সময় পবিত্র থাকার চেষ্টা করবো।
তথ্যসূত্র: আল কোরআন, সূরা বাকারা, আয়াত নং-২০৮, বুখারি শরিফ, হাদিস নং-৩২৭৬, কিতাবুল ফাতাওয়া, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-২৭৬

প্রশ্ন করেছেন : আল আমিন আল হাদী, সাভার- ঢাকা

প্রশ্ন অনুমতি ছাড়া স্বামীর টাকা খরচ করা যাবে কি?

উত্তরঃ উত্তর: অনুমতি ছাড়া স্বামীর টাকা খরচ করা স্ত্রীর জন্য জায়েজ নেই। তবে স্ত্রী যদি জানেন, নিজের মা-বাবা অথবা ভাইয়ের জন্য অল্প-স্বল্প খরচ করলে কিংবা মাঝে মধ্যে তাদের হাদিয়া দিলে স্বামী মন খারাপ করবেন না; তাহলে এমন কিছু ক্ষেত্রে স্বামীর স্পষ্ট অনুমতি ছাড়া স্ত্রী খরচ করতে পারবেন। যেহেতু স্বামী এতে সায় দেবেন এবং আপত্তি করবেন না বলে—স্ত্রীর প্রবল ধারণা রয়েছে। আর এতে তারা দুইজনই সওয়াব পাবেন।

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি কোনো স্ত্রী ক্ষতি না করে বাড়ির খাবার থেকে দান করে, তাহলে সে তার দানের সওয়াব পাবে এবং তার স্বামী এ খাবার উপাজর্নের কারণে সওয়াব পাবে। আর সঞ্চয়কারীও সওয়াব পাবে। এদের কেউ অন্যের সওয়াবে কমতি করবে না।’ (মুসলিম, হাদিস নং: ১৭০৬)

কিন্তু স্বামী যদি রাগ করেন বা নিষেধ করেন, তাহলে কম হোক বা বেশি হোক—তার সম্পদ খরচ বা দান-সদকা করা থেকে বিরত থাকা অত্যাবশ্যক। কারণ, রাসুল (সা.) বলেন, ‘মহিলা তার স্বামীর বাড়ির কোনো অর্থ-সম্পদ তার অনুমতি ছাড়া খরচ করবে না। জিজ্ঞেস করা হলো, খাদ্যদ্রব্যও নয়? তিনি বলেন, এটি তো আমাদের সবচেয়ে উত্তম সম্পদ।’ (আবু দাউদ, হাদিস নং: ৩৬৬৫)

প্রশ্ন করেছেন : তাহমিনা জান্নাত
শিক্ষিকা : লালবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঢাকা

প্রশ্ন হজ এবং ওমরাহের বিধান কী? কার ওপর ওমরাহ ফরজ এবং কার ওপর হজ ফরজ?

উত্তরঃ হজ
হজ আরবি শব্দ। হজের আভিধানিক অর্থ হলো ইচ্ছা করা এবং সফর বা ভ্রমণ করা। ইসলামি পরিভাষায় হজ হলো নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত স্থানে বিশেষ কিছু কর্ম সম্পাদন করা। হজের নির্দিষ্ট সময় হলো আশহুরে হুরুম বা হারাম মাসসমূহ তথা শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ; বিশেষত ৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত পাঁচ দিন। হজের নির্ধারিত স্থান হলো মক্কা শরিফে কাবা, সাফা-মারওয়া, মিনা, আরাফা, মুজদালিফা ইত্যাদি এবং মদিনা শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা শরিফ জিয়ারত করা। হজের বিশেষ আমল বা কর্মকাল হলো ইহরাম, তাওয়াফ, সাঈ, অকুফে আরাফাহ, অকুফে মুজদালিফা, অকুফে মিনা, দম, কোরবানি, হলক, কছর, জিয়ারতে মদিনা—রওজাতুল রাসুল ইত্যাদি।
পবিত্র হজ আল্লাহ তাআলার একটি বিশেষ বিধান। হজ ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের একটি। আর্থিক ও শারীরিকভাবে সমর্থ পুরুষ ও নারীর ওপর হজ ফরজ। হজ সম্পর্কে কোরআন শরিফে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর তরফ থেকে সেই সব মানুষের জন্য হজ ফরজ করে দেওয়া হয়েছে, যারা তা আদায়ের সামর্থ্য রাখে।’ (সুরা আলে ইমরান; আয়াত: ৯৭)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রকৃত হজের পুরস্কার বেহেশত ব্যতীত অন্য কিছুই হতে পারে না। সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে যাঁরা হজ পালন করবেন, আল্লাহ তাআলা তাঁদের হজ কবুল করবেন এবং তাঁদের জন্য অফুরন্ত রহমত ও বরকত অবধারিত।
নবী করিম (সা.) বলেন, ‘হজ মানুষকে নিষ্পাপে পরিণত করে, যেভাবে লোহার ওপর থেকে মরিচা দূর করা হয়।’ (তিরমিজি)। যে ব্যক্তির ওপর হজ ফরজ করা হয়েছে অথচ তিনি হজ আদায় করেন না, তাঁর জন্য রয়েছে বিশেষ সাবধান বাণী। হজ মানুষকে নিষ্পাপ করে দেয়। রাসুলে করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি যথাযথভাবে হজ পালন করে, সে পূর্বেকার পাপ থেকে এ রকম নিষ্পাপ হয়ে যায়, যে রকম সে মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিন নিষ্পাপ ছিল।’ (বুখারি)।
জীবনে একবার হজ করা ফরজ। সামর্থ্যবানদের জন্য প্রতি পাঁচ বছর অন্তর হজ করা সুন্নত। সুযোগ থাকলে বারবার বা প্রতিবছর হজ করাতে বাধা নেই। যেকোনো অর্থ দ্বারা হজ সম্পাদন করা যাবে। হাদিয়া বা অনুদানের টাকা দিয়েও হজ করলে তা আদায় হবে। চাকরি বা কোনো প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল হিসেবে কর্তব্য কাজের সুবাদে হজ করলেও হজ আদায় হবে। এটি বদলি হজ না হলে নিজের ফরজ হজ আদায় হবে; ফরজ হজ আগে আদায় করে থাকলে এটি নফল হবে। নফল হজ অন্য কোনো ব্যক্তির বদলি হজের নিয়তে আদায় করলে তা–ও হবে। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরি)।

ওমরাহ
ওমরাহ আরবি শব্দ। ওমরাহর আভিধানিক অর্থ হলো ধর্ম, কর্ম, ইবাদত, সুখকর, সেবা, স্থিতিশীল, জীবন, মহাপ্রাচীন, স্থাপত্য-স্থাপনা, প্রাপ্তি, অভ্যর্থনা, জিয়ারত বা সফর ও ইচ্ছা। যিনি ওমরাহ করেন, তাঁকে ‘মুতামির’ বলা হয়। (লিসানুল আরব)। ইসলামি পরিভাষায় ওমরাহ হলো নির্ধারিত স্থানে নির্দিষ্ট কর্ম সম্পাদন করা। ওমরাহর নির্দিষ্ট কাজকর্ম হলো ইহরাম, তাওয়াফ, সাঈ, হলক, কছর ইত্যাদি। ওমরাহর নির্ধারিত স্থান হলো কাবা শরিফ, সাফা-মারওয়া ইত্যাদি। আফাকি তথা দূরবর্তী ওমরাহ সম্পাদনকারীর জন্য মদিনা মুনাওয়ারায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা শরিফ জিয়ারত করা সুন্নত। ওমরাহ সম্পাদনের বিশেষ কোনো সময় সুনির্দিষ্ট নেই; তবে হজের নির্ধারিত বিশেষ সময়ে (৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত পাঁচ দিন) ওমরাহ পালন করা বিধেয় নয়; এই পাঁচ দিন ছাড়া বছরের যেকোনো দিন যেকোনো সময় ওমরাহ প্রতিপালন করা যায়। হজের সফরেও ওমরাহ করা যায়। একই সফরে একাধিক ওমরাহ করতেও বাধা নেই। হজের আগেও (হজ না করেও) ওমরাহ করা যায় এবং হজের পরও বারবার ওমরাহ করা যায়। হজ যেমন জীবনে একবার ফরজ, তেমনি ওমরাহ জীবনে অন্তত একবার সুন্নত।
রমজানে ওমরাহ পালন করা হজের সমান সওয়াব; শাওয়াল মাসও ওমরাহ করার জন্য উত্তম সময়। তবে হজ ফরজ থাকা অবস্থায় তা আদায়ের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও হজ সম্পন্ন না করে বারবার ওমরাহ করা অযৌক্তিক। কারণ, শত-সহস্র ওমরাহও হজের সমকক্ষ হবে না। অনুরূপভাবে ওমরাহ আদায় করলে হজ ফরজ হয়ে যায়, এমনটিও সঠিক নয়।
ওমরাহর জন্যও হজের মতোই মিকাত থেকে ইহরাম করতে হয়। বাংলাদেশ থেকে আমাদের মিকাত হলো ইয়ালামলাম পাহাড়, যা জেদ্দার পূর্বে অবস্থিত। মদিনা থেকে মিকাত হলো জুলহুলায়ফা নামক স্থান। মক্কা থেকে ওমরাহ করতে চাইলে তার মিকাত হলো তানয়িম বা আয়িশা মসজিদ অথবা জিরানা নামক জায়গা। (মক্কা থেকে হজের ইহরামের জন্য মিকাত প্রযোজ্য নয়)। ওমরাহকে ‘ওমরাহ হজ’ বা ছোট হজও বলা হয়।
ওমরাহ সম্পর্কে কোরআন করিমে রয়েছে: ‘নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনাবলির অন্যতম; তাই যারা হজ করবে বা ওমরাহ করবে, তারা এতদুভয়ের প্রদক্ষিণ (সায়ী) করবে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৫৮)। ওমরাহ পালন করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আমল। এটি পুরুষ ও মহিলা সবার জন্য প্রযোজ্য। ওমরাহ করলে হজ ফরজ হয়ে যায়, এ রকম কোনো বিধান নেই। মক্কা-মদিনার প্রতি আকর্ষণ ও হৃদয়ের টান ইমানের পরিচায়ক। তাই অনেকে প্রেমের টানে বারবার হজ ও ওমরাহ করে থাকেন।
ওমরাহ নিজের জন্য যেমন করা যায়, তেমনি অন্যদের জন্যও করা যায়। জীবিত বা মৃত, ছোট বা বড়, আত্মীয় বা অনাত্মীয় যেকোনো ব্যক্তির জন্যও ওমরাহ আদায় করা যায়।

প্রশ্ন আসসালামু আলাইকুম! মুহতারাম, মুসাফিরের নামাজের বিধান জানতে চাই?

উত্তরঃ ব্যক্তিগত প্রয়োজন, অফিসিয়াল কাজকর্ম কিংবা আনন্দ-ভ্রমণসহ বিভিন্ন কারণে দূর-দূরান্তে সফর করতে হয়। এটা মানুষের জীবনযাত্রার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। মানুষ নিজের আবাস্থলে থাকলে পুরোপুরি নামাজ আদায় করতে হয়। কিন্তু ভ্রমণে গেলে আল্লাহর পক্ষ থেকে আলাদা সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তখন নামাজ সংক্ষেপ করাই ইসলামের বিধান। মূলত কোনো ব্যক্তি তার অবস্থানস্থল থেকে ৪৮ মাইল তথা ৭৮ কিলোমিটার দূরে সফরের নিয়তে বের হয়ে তার এলাকা পেরিয়ে গেলেই শরিয়তের দৃষ্টিতে সে মুসাফির হয়ে যায়। (জাওয়াহিরুল ফিক্বহ ১/৪৩৬, আহসানুল ফাতাওয়া ৪/১০৫)
মুসাফিরের নামাজকে শরিয়তের পরিভাষায় কসর বলা হয়। আরবি কসর শব্দের অর্থ হলো- কম করা, কমানো। ইসলামি শরিয়তে কোনো ব্যক্তি যদি ৪৮ মাইল (৭৮ কিলোমিটার) বা তারও বেশি দূরত্বের ভ্রমণে নিজের বাসস্থান থেকে বের হন, তাহলে তিনি মুসাফির। আর তিনি যদি সেখানে ১৫ দিনের কম সময় থাকার নিয়ত করেন, তবে চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজ দুই রাকাত পড়বেন। এই সংক্ষেপ করার মাঝে আল্লাহতাআলা কল্যাণ রেখেছেন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা যখন জমিনে সফর করবে, তখন তোমাদের জন্য নামাজের কসর করায় কোনো আপত্তি নেই। (সুরা নিসা, আয়াত: ১০)

নিজ এলাকা, গ্রাম বা শহর অতিক্রম করার পর থেকেই সফরের বিধান আরোপিত হবে। এ সময় সফরকারীকে মুসাফির বলে গণ্য করা হবে। শহরের ক্ষেত্রে ওই শহরের করপোরেশনের নির্ধারিত সীমানা থেকে সফরের সীমা নির্ধারিত হবে। অনুরূপ সফর থেকে ফিরে আসার ক্ষেত্রেও নিজ এলাকার সীমানায় প্রবেশের সঙ্গেই তার সফরের বিধান শেষ হয়ে যাবে। (রদ্দুল মুহতার ২/১২৮)
আকাশ পথে সফরের ক্ষেত্রেও দূরত্বের হিসাব স্থলভাগে সফরের দূরত্বের অনুপাতে হবে। অর্থাৎ স্থলভাগের ৭৮ কিলোমিটার পরিমাণ দূরত্বের সফর হলে আকাশপথে মুসাফির হবে। (রদ্দুল মুহতার ১/৭৩৫)
অনুরূপ পার্বত্য এলাকায় সফরের ক্ষেত্রেও সমতলে চলার হিসেবেই হবে, অর্থাৎ পাহাড়ের উঁচু-নীচু ঢালুসহ দূরত্বের হিসাব হবে। (ফাতহুল ক্বাদির ২/৩১, আল বাহরুর রায়েক ২/২২৯)

মুসাফিরের বিধান
সফরকারীর জন্য শরিয়তের বিধি-বিধানে কিছু শিথিলতা রয়েছে। যেমন- চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজগুলো দুই রাকাত আদায় করবে। সফরে রোজা না রেখে পরবর্তী সময়ে কাজা করলেও চলবে। অনুরূপভাবে মোজায় মাসেহ করা ইত্যাদি বিধানে সাধারণ অবস্থা থেকে ভিন্নতা রয়েছে। মুসাফির সফর অবস্থায় কোনো মুকিম (স্থানীয়) ইমামের পেছনে নামাজের নিয়ত না করলে, তার জন্য চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজ দুই রাকাত পড়া জরুরি। এটাকে কসরের নামাজ বলে। এটাই ইসলামের বিধান।

মুসাফিরের নামাজের বিধান
মুসাফির চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজ একাকী পড়লে বা তার মতো মুসাফির ইমামের পেছনে আদায় করলে, নামাজ কসর করা জরুরি। এক্ষেত্রে পূর্ণ নামাজ পড়া ঠিক নয়। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আল্লাহতাআলা তোমাদের নবীর জবানে নামাজকে মুকিম অবস্থায় চার রাকাত ও সফর অবস্থায় দুই রাকাত ফরজ করেছেন। ’ (মুসলিম, হাদিস নং: ৬৮৭)
মুসাফির ব্যক্তি সফর অবস্থায় (নিজে একাকী কিংবা মুসাফির ইমামের পেছনে, স্থানীয় ইমামের পেছনে হলে অসুবিধা নেই। ) ইচ্ছাকৃত চার রাকাত নামাজ পূর্ণ করলে গুনাহ হবে। এ ক্ষেত্রে নামাজ পুনরায় পড়া ওয়াজিব। আর যদি ভুলক্রমে চার রাকাত পূর্ণ করে নেয়, তাহলে যদি সে প্রথম বৈঠক করে থাকে, তাহলে সেজদা সাহু করে নিলে ফরজ নামাজ আদায় হয়ে যাবে। আর যদি প্রথম বৈঠক না করে থাকে তাহলে ফরজ আদায় হবে না, আবারও পড়তে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে ১/৯১)

স্থানীয় ইমামের পেছনে পড়ার বিধান
মুসাফির ব্যক্তি স্থানীয় ইমামের পেছনে ইকতিদা করলে সে ইমামের অনুসরণে পূর্ণ নামাজই আদায় করবে। (আল মাবসুত, সারাখসি ১/২৪৩)। এ বিষয়ে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মুসাফির যদি মুকিমদের সঙ্গে নামাজে শরিক হয় তবে সে তাদের মতো (চার রাকাত) নামাজ পড়ে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৩৮৪৯)
সফর অবস্থায় নামাজ কসর করা সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে। এ সব হাদিস দ্বারা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) সফর অবস্থায় সর্বদা নামাজ কসর পড়েছেন। আর সফর অবস্থায় তিনি চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামায পূর্ণ পড়েছেন এটা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। আর মাগরিব, বিতর ও ফজরের নামাজ পূর্ণই আদায় করতে হবে। এগুলোর কসর নেই। তেমনিভাবে সুন্নত নামাজেরও কসর হয় না। তাই সুন্নত পড়লে পুরোটাই পড়বে।

মুসাফির যদি ইমাম হয়
স্থানীয় কোনো ব্যক্তি যদি মুসাফির ইমামের পেছনে ইকতিদা করে, তাহলে চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজগুলোতে ‘মুসাফির ইমাম’ নামাজ দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরানোর পর মুকিম (স্থানীয়) মুক্তাদি দাঁড়িয়ে সুরা পড়া ছাড়া বাকি দুই রাকাত নামাজ পড়ে নিবে। সফর অবস্থায় ছুটে যাওয়া নামাজ মুকিম অবস্থায় (আবাস্থলে এসে) কাজা করলে ‘কসর’ই আদায় করবে, আর মুকিম অবস্থায় ছুটে যাওয়া নামাজ সফরে কাজা করলে তা পূর্ণ আদায় করবে। (হেদায়া ১/৮১)

স্থায়ী ও অস্থায়ী আবাসের বিধান
কোনো জায়গায় ১৫ দিন বা ততধিক অবস্থানের নিয়ত করলে সে সেখানে মুকিম হয়ে যাবে। সেখান থেকে সামানা-পত্রসহ প্রস্থানের আগ পর্যন্ত সেখানে পূর্ণ নামাজ পড়বে এবং মুকিমের বিধান জারি থাকবে। (বাদায়েউস সানায়ে ১/১০৪)
স্থায়ী আবাসস্থল পরিবর্তন করে অন্যস্থানে মূল আবাস গড়লে স্থায়ী বসবাসের জন্য সেখানে না যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে আগের অবস্থানস্থল মৌলিক আবাসন হিসেবে গণ্য হবে না, এমনকি সেখানে তার মালিকানা জায়গা-জমিন থাকলেও নয়, বরং সেখানেও সফরের সীমানা অতিক্রম করে গেলে মুসাফিরই থাকবে। (আল মাবসূত, সারাখসী ১/২৫২)
নারীরা বিবাহের আগ পর্যন্ত বাবার বাড়িতে মুকিম থাকবে তবে বিবাহের পর যদি স্বামীর বাড়িতে মৌলিকভাবে থাকে এবং বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসে, তাহলে স্বামীর বাড়ি তার মৌলিক আবাসন হিসেবে ধর্তব্য হবে এবং বাবার বাড়িতে মুসাফির থাকবে। আর যদি বাবার বাড়িতে মৌলিকভাবে থাকে, তাহলে তা তার মূল অবস্থানস্থল হিসেবেই বাকি থাকবে। (আল বাহরুর রায়েক ২/১২৮, রদ্দুল মুহতার ২/১৩১)
আর পুরুষগণ তার শ্বশুরবাড়িতে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করলে মুসাফিরই থাকবে। হ্যাঁ, কেউ যদি সেখানে স্থায়ী আবাস করে নেয়, তাহলে তা ভিন্ন কথা।

মুসাফিরের সুন্নত পড়ার বিধান
মুসাফির ব্যক্তির জন্য তার চলন্ত অবস্থায় বা তাড়াহুড়া থাকলে ফজরের সুন্নাত ছাড়া অন্যান্য সুন্নাতে মুয়াক্কাদা না পড়ার সুযোগ রয়েছে। তবে স্বাভাবিক ও স্থির অবস্থায় সুন্নাতে মুয়াক্কাদা পড়তে হবে। (এলাউস্ সুনান ৭/১৯১, রদ্দুল মুহতার ১/৭৪২)
মূলত সফর অবস্থায় তাড়াহুড়া ও ব্যস্ততার সময় সুন্নত পড়বে না। আর গন্তব্যে পৌঁছার পর সুন্নত নামাজ পড়া উত্তম।

স্মতর্ব্য যে, ভ্রমণে পূর্ণ নামাজের স্থানে অর্ধেক পড়ার কারণে কারও মনে এরূপ ধারণা তৈরি হতে পারে যে, নামাজ বোধহয় পূর্ণ হলো না। বস্তুত এটা সঠিক ধারণা নয়। কারণ, ভ্রমণে নামাজ কসর করা বা সংক্ষেপে আদায় করা শরিয়তের বিধান ও নির্দেশ। উপরন্তু এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ সুযোগও বটে। তাই এটা পালনেই সওয়াব। এর ব্যাতিক্রম করা সম্পূর্ণ অনুচিত।

প্রশ্ন নামাজের ফরজ কয়টি? কুরআন হাদিসের প্রমাণসহ জানালে উপকৃত হব।

উত্তরঃ নামাজের ফরজ কাজ ১৩টি।
নামাজের বাইরে সাতটি ফরজঃ
১. শরীর পবিত্র হওয়া। [সুরা মায়িদা, আয়াত ৬; তিরমিজি, হাদিস : ১, ৩ (হাদিসটি হাসান)]
২. কাপড় পবিত্র হওয়া। [সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত ৪; তিরমিজি, হাদিস : ১, ৩ (হাসান)]
৩. নামাজের জায়গা পবিত্র হওয়া। [সুরা বাকারা, আয়াত : ১২৫; তিরমিজি, হাদিস : ১, ৩ (হাসান)]
৪. সতর ঢাকা (অর্থাৎ পুরুষের নাভি থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত এবং নারীদের চেহারা, দুই হাত কবজি পর্যন্ত ও পায়ের পাতা ছাড়া গোটা শরীর ঢেকে রাখা। মনে রাখা আবশ্যক, পর্দার ক্ষেত্রে নারীদের পুরো শরীর সতরের অন্তর্ভুক্ত)। [সুরা আরাফ, আয়াত ৩১; সুরা নূর, আয়াত ৩১; আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৬ (হাসান), মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬৭৫৬ (হাসান), তিরমিজি ১/২২২, হাদিস : ১১৭৩, ৩৭৭ (সহিহ), আবু দাউদ ১/৯৪, হাদিস : ৬৪১ (সহিহ), ২/৫৬৭, হাদিস : ৪১০৪ (গ্রহণযোগ্য), মারাসিলে আবি দাউদ ৮৬, হাদিস : ২৮ (গ্রহণযোগ্য)]
৫. কিবলামুখী হওয়া। [সুরা বাকারা, আয়াত ১৪৪; বুখারি ২/৯২৪, হাদিস : ৬২৫১]
৬. ওয়াক্তমতো নামাজ পড়া। [সুরা নিসা, আয়াত : ১০৩; বুখারি ১/৭৫, হাদিস : ৫২১]
৭. অন্তরে নির্দিষ্ট নামাজের নিয়ত করা। [বুখারি ১/২, হাদিস : ১]

নামাজের ভেতরে ছয়টি ফরজ
১. তাকবিরে তাহরিমা, অর্থাৎ শুরুতে আল্লাহু আকবার বলা।
[সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত ৩; বুখারি ১/১০১, হাদিস : ৮৩৩, মুসলিম ১/১৭৬, হাদিস : ৪১১, ৪১২, তিরমিজি ১/৫৫, হাদিস : ২৩৮]
২. ফরজ ও ওয়াজিব নামাজ দাঁড়িয়ে পড়া। [সুরা বাকারা, আয়াত ২৩৮; বুখারি ১/১৫০, হাদিস : ১১১৭, তিরমিজি ১/৬৬, হাদিস : ৩০৪ (হাদিসটি সহিহ)]
৩. কিরাত পড়া (অর্থাৎ কোরআন শরিফ থেকে ন্যূনতম ছোট এক আয়াত পরিমাণ পড়া ফরজ)। [সুরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত ২০; বুখারি ২/৯২৪, হাদিস : ৬২৫১, তিরমিজি ১/৬৬, ৬৭, হাদিস : ৩০২, ৩০৩ (হাদিসটি সহিহ)]
৪. রুকু করা। [সুরা হজ, আয়াত ৭৭; বুখারি ১/১৫০, হাদিস : ১১১৩, ১১১৪, মুসলিম ১/১৭৭, হাদিস : ৪১২]
৫. দুই সিজদা করা। [সুরা হজ, আয়াত ৭৭; বুখারি ১/১০১, হাদিস : ৭৩৩, মুসলিম ১/১৭৬, হাদিস : ৪১১]
৬. শেষ বৈঠক (নামাজের শেষে তাশাহহুদ পরিমাণ বসা) [আবু দাউদ : ১/১৩৯, হাদিস : ৯৭০ (সহিহ)]
বি.দ্র. : নামাজি ব্যক্তির নিজস্ব কোনো কাজের মাধ্যমে (যেমন—সালাম ফেরানো ইত্যাদি) নামাজ থেকে বের হওয়াও একটা ফরজ। [আল বাহরুর রায়িক, ১ : ৫১৩]
নামাজের কোনো ফরজ বাদ পড়লে নামাজ বাতিল হয়ে যায়। সাহু সিজদা করলেও নামাজ সহিহ হয় না। [আল বাহরুর রায়িক, ১ : ৫০৫) ফাতাওয়া শামি, ১ : ৪৪৭, হিদায়া, ১ : ৯৮]

প্রশ্ন করেছেন : মুহাম্মদ আদনান রাফি,
রামপুরা, ঢাকা।