Loader
শিক্ষা, শান্তি, সেবা ও সামাজিক উন্নয়নই নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশন-এরমূল লক্ষ্য। পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও পরোপকার-এর মাধ্যমে বিশ্বমানবতার কল্যাণই আমাদের একমাত্র ব্রত। আর্তমানবতার সেবা, সমাজ সংস্কার, কর্মসংস্থান তৈরি, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, এতিম, গরিব, বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের ভরণপোষণ, ছিন্নমূল ও পথবাসীদের পুনর্বাসন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানসহ সব শ্রেণির নাগরিকদের নৈতিক ও চারিত্রিক উন্নয়নের মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি আমরা।

বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের বক্তব্য


দেশের শিল্প খাতের সফল ‘আইকন’ যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম। যে হাতে অস্ত্র নিয়ে সম্মুখ সারিতে থেকে যুদ্ধ করে ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন করেন, স্বাধীনতার পরও থেমে থাকেনি সেই হাত।
দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য শুরু করেন নতুন যুদ্ধ। মেধা, সততা, পরিশ্রম ও সাহসিকতা দিয়ে একে একে গড়ে তোলেন চার দশকে ৪১টি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান দেশের শিল্প ও সেবা খাতে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। এর মধ্যে এশিয়ার বৃহত্তম শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্ক, যমুনা ইলেকট্রনিক্স এবং যমুনা ডেনিম অন্যতম। মিডিয়া-জগতেও গড়ে তুলেছেন দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টিভির মতো দুটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরাসরি তৈরি হয়েছে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান।
স্বপ্ন ছিল দেশকে শিল্পোন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে গত সোমবার না-ফেরার দেশে চলে যান তিনি। দীর্ঘ কর্মজীবনে সব সময়ই সহকর্মীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সততা ও সাহসিকতার সঙ্গে দেশের কল্যাণে কাজ করার পরামর্শ দিতেন রণাঙ্গনের এই অকুতোভয় সৈনিক। দুর্নীতির সঙ্গে নিজে যেমন কখনও আপস করেননি, তেমনি তার সন্তান ও প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের দিয়েছেন একই দীক্ষা। যুগান্তর, যমুনা টিভিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সহকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আমাদের মূলমন্ত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করা, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হিসেবে কাজ করা। কারণ ৪৭ বছর আগে আমরা কী অবস্থায় ছিলাম আর আজ আমাদের কী অবস্থান। এ দেশ স্বাধীন করে আমাদের উপহার দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর কাছে ঋণী। আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যরা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের কাছে ঋণী। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের কাছে প্রমাণ করেছেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। তার এ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আমি শরিক হতে চাই। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে এগিয়ে নিতে চাই।’ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার এসব পরামর্শমূলক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যের চুম্বকীয় অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-

এসেছি খালি হাতে, যেতেও হবে খালি হাতে : ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল যমুনা টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বলেন, আমরা পৃথিবীতে সবাই এসেছি খালি হাতে, যেতেও হবে খালি হাতে। কিন্তু যদি ভালো কাজ করি, মানুষ যুগ যুগ ধরে মনে রাখবে। সারা জীবন প্রশংসা করবে। অপরদিকে খারাপ কাজ করলে তাকে গালিই দেবে। সবাইকে দেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন আমরা সবাই দেশের জন্য কাজ করি, জনগণের জন্য কাজ করি। সবাই মিলে দেশটাকে গড়ে তুলি।
একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করি। তিনি বলেন, আজ থেকে ৪৭ বছর আগে আমরা কী অবস্থায় ছিলাম আর আজ আমাদের কী অবস্থা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। একটি পতাকা পেয়েছি। দেশ স্বাধীন না হলে যিনি আজ সচিব হয়েছেন, তিনি উপসচিব হিসেবে অবসরে যেতেন। যিনি মেজর হিসেবে অবসরে যেতেন, দেশ স্বাধীন হওয়ায় তিনি আজ পূর্ণাঙ্গ জেনারেল হতে পেরেছেন। নুরুল ইসলাম বলেন, আমি আজ প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী; কিন্তু আমার নামের একই ব্যক্তি কেউ রিকশা চালান, কেউ বড় কর্মকর্তা আবার কেউ আরও বড় কিছু। সবকিছুই কর্মের ফল। তিনি আরও বলেন, সমাজে লুকিয়ে থাকা অনেক অন্যায়-অপরাধ মানুষের সামনে তুলে ধরছি আমরা। শোষিত, অত্যাচারিত, অবহেলিত, বঞ্চিতদের কথা বলছি। আমাদের মিডিয়া সত্যকে সত্য বলেছে, মিথ্যাকে মিথ্যা বলেছে। আমাদের মূলমন্ত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করা, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হিসেবে কাজ করা।

মানুষের সেবা করব : গত বছরের ১৫ অক্টোবর যমুনা ফিউচার পার্কে দেশের সর্ববৃহৎ সুপার শপ হোলসেল ক্লাবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, শুরু থেকে মানুষের সেবা করে যাচ্ছি। যতদিন বেঁচে থাকব, এই সেবা করে যাব। তিনি বলেন, আজ এমন একটি উপহার আমি আপনাদের দিতে চাই, যা মানুষের কল্পনার বাইরে ছিল। আমারও এটি কল্পনার মধ্যে ছিল না। যা হল, হোলসেল ক্লাব। এখানে একই ছাদের নিচে বিশ্বমানের ৫ শতাধিক পণ্য পাইকারি দামে কিনতে পারবে মানুষ। তিনি বলেন, আমি আপনাদের সেবার দায়িত্ব নিয়েছি। যতদিন বেঁচে থাকব, এই সেবা করে যাব। ওয়াদা থেকে আমি কখনও পেছনে যাব না। নুরুল ইসলাম আরও বলেন, আপনাদের দোয়ায় আল্লাহ আমাদের অনেক ভালো পজিশনে রেখেছেন। আমরা ছোট একটি দেশে বসবাস করি। একে অপরকে চিনি। ভালো-মন্দ নিয়েই আমাদের বাংলাদেশ। সব পেশায়ই ভালো-মন্দ রয়েছে। তবে সবকিছুর মালিক আল্লাহ। তিনি বলেন, কেউ ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে সৎপথে কাজ করলে তার রেজাল্ট পায়। আর খারাপ কাজ করলে তার শাস্তিও পায়।
নুরুল ইসলাম বলেন, মানুষের জন্য সবকিছুর আয়োজন করা আল্লাহরই দায়িত্ব। ভাগ্য নির্ধারণ করেন একমাত্র আল্লাহ। আর মানুষের দায়িত্ব হল কাজ করে যাওয়া। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, কাউকে ঠকিয়ে বা কারও সঙ্গে প্রতারণা করে পৃথিবীতে কেউ কোনো দিন ভালো থাকতে পারেনি। ইতিহাস বলে, কাউকে ঠকিয়ে কিছু সময়ের জন্য আনন্দে থাকা যায়। কিন্তু অন্যায়ভাবে কাউকে ঠকানো হলে তার রেজাল্ট আপনি অবশ্যই পাবেন। আর এই বিষয়টি মনে রেখেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমি কাজ করে যাচ্ছি। বিশিষ্ট এই শিল্পপতি বলেন, আমি যখন যমুনা ফিউচার পার্ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলাম, তখন অনেকে বলেছেন, এই লোকটার মাথা খারাপ বা বুদ্ধির কোনো ঘাটতি রয়েছে। তা না হলে বাংলাদেশে এত বড় মার্কেট করার উদ্যোগ নিত না।
এসব কথা শুনে আমি মনে মনে হাসতাম। আজ প্রমাণ করেছি, আমরা পারি। সারা পৃথিবী থেকে যেসব মানুষ বাংলাদেশে আসে, তারা ফিউচার পার্কে দল বেঁধে আসে। তারা দেখে আনন্দ করে। ওইসব বিদেশি বুঝতে পারে, বাংলাদেশ অনেক উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের সেই গরিবের অবস্থায় বাংলাদেশ আর নেই। নুরুল ইসলাম বলেন, যমুনা ফিউচার পার্ক এখন আমার নয়, সারা বাংলাদেশের, ১৬ কোটি মানুষের সম্পদ। আমি ম্যানেজার হিসেবে দেখাশোনার দায়িত্বে আছি। সেবা দিয়ে যাচ্ছি। বিদেশিরা যখন এই ফিউচার পার্কের প্রশংসা করে, তখন দেশের সব নাগরিক এর অংশীদার হয়।

সত্য বলতে পিছপা হয় না যুগান্তর : চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি যুগান্তর কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বীর যুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বলেন, সত্যকে সত্য, মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে পিছপা হয় না যুগান্তর। কালোকে কালো, আর সাদাকে সাদা বলতে বদ্ধপরিকর এ প্রতিষ্ঠান। আমরা কাজ করতে চাই জনগণের জন্য, জনকল্যাণের জন্য। অত্যাচার, জুলুম, দুর্নীতি, অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা দূর করে সমাজকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে চাই। একটি সুন্দর ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে সমাজ পরিচালিত হোক- এটাই আমাদের চাওয়া। আগামী দিনের জন্য সেই সুন্দর সমাজ আমরা রেখে যেতে চাই। তিনি বলেন, যুগান্তর সরকারের বিরুদ্ধে নয়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার করে সরকারের পদক্ষেপকে আমরা সহযোগিতা করতে চাই। জনগণের কল্যাণে নেয়া সব কাজকে আমরা সমর্থন করি। সরকার বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো চলমান আছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশের মানুষ লাভবান হবে। উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সত্য উদ্ঘাটনে পিছপা হবেন না। দুর্নীতি, অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলার নেপথ্য কারণ বের করে আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে সব ধরনের সহযোগিতা আপনারা পাবেন। তবে রিপোর্ট যেন আর্টিফিসিয়াল বা বানানো না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

দেশ স্বাধীন না হলে যমুনা গ্রুপের স্বত্বাধিকারী হতে পারতাম না : চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি যুগান্তরের ২১তম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নুরুল ইসলাম বলেন, দেশ স্বাধীন না হলে আজ আমি যমুনা গ্রুপের স্বত্বাধিকারী হতে পারতাম না। বিষয়টা স্বাধীনতার আগের ইতিহাসের দিকে তাকালেই প্রতীয়মান হবে। তিনি বলেন, এ দেশ স্বাধীন করে আমাদের উপহার দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর কাছে ঋণী। আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যরা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের কাছে ঋণী। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের কাছে প্রমাণ করেছেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। তার এ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আমি শরিক হতে চাই।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখতে পেরে আমি গর্বিত : ২০১৭ সালের ১ অক্টোবর যমুনা ফিউচার পার্কে যমুনা গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে নবাবগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। আমি যে মুক্তিযোদ্ধা, তা কখনও কারও কাছে বলিনি। তবে দেশের জন্য কিছু করতে পেরে বা অবদান রাখতে পেরে আমি গর্বিত ও আনন্দিত। তিনি বলেন, আমাদের যে অর্জন, তার ভিত্তি হল মুক্তিযুদ্ধ। কারণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই আমাদের স্বনির্ভরতা শুরু হয়। কীভাবে অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হবে, শুরু হয় সেই যুদ্ধ। আর সেই যুদ্ধ এখনও চলছে।

যমুনা ফিউচার পার্কের মালিক দেশের ১৬ কোটি মানুষ : ২০১৩ সালের ৩১ আগস্ট এশিয়ার সর্ববৃহৎ শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্কের লেভেল ফাইভের উদ্বোধন করেন উন্নত বাংলাদেশের এই স্বপ্নদ্রষ্টা। এ সময় তিনি বলেন, বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ এই ফিউচার পার্ক শুধু যমুনা গ্রুপের সম্পত্তি নয়, এটির মালিক বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ। দীর্ঘদিনের শ্রম ও ত্যাগের বিনিময়ে আল্লাহর অশেষ রহমতে যমুনা ফিউচার পার্ক চালু হতে যাচ্ছে। প্রথম দুটি শপিংমল যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায়। এশিয়ার মধ্যে যমুনা ফিউচার পার্কই সর্ববৃহৎ। তিনি বলেন, আমি ম্যানেজার হিসেবে দেখাশোনার দায়িত্বে আছি। সেবা দিয়ে যাব। মার্কেটে যারা দোকান নিয়েছেন, আমরা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা শত শত লোক এদেরকে নিয়ে ভাবি। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। লক্ষ্য একটাই। আর তা হল মানুষের সেবা।

সঠিক পরিকল্পনা, সততা ও পরিশ্রম : ২০১৫ সালের ২৮ মার্চ যমুনা গ্রুপের অন্যতম অঙ্গপ্রতিষ্ঠান যমুনা ইলেকট্রনিক্সের ডিলার সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান। এ সময় তিনি বলেন, ব্যবসার মূল হল পরিকল্পনা। যার পরিকল্পনা যত বেশি বাস্তবসম্মত, নিখুঁত, সুদৃঢ় এবং সময়োপযোগী, তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠা লাভের সুযোগও তত বেশি। সততা, দক্ষতার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। এ সময় যমুনা গ্রুপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের প্রতিটি পণ্য বিশ্বমানের। কারণ পণ্যের মানের ব্যাপারে আমরা কোনো আপস করি না। কারণ আমাদের ব্যবসা একদিনের নয়। আমরা দীর্ঘদিন ব্যবসা করতে চাই। তিনি বলেন, ১৯৭৪ সাল থেকে ব্যবসা করছি। এখানে পণ্যের মানের ব্যাপারে অভিযোগ নেই। তাই গ্রাহকের আস্থা আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।

ভালোবাসার মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে হবে : ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল গুলশান হেলথ ক্লাব আয়োজিত অনুষ্ঠানে যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, দুঃখ-কষ্ট ভুলে গিয়ে দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে হবে। দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে। দেশের মানুষকে ভালোবেসেই আমি যমুনা গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেছি। আপনারাও সাধ্য অনুসারে দেশের কল্যাণে কাজ করবেন। কারণ দেশ আমাদের মা।
বিনিয়োগের বিকল্প নেই : ২০১৫ সালের ৫ নভেম্বর হবিগঞ্জের মাধবপুরে যমুনা স্পিনিং মিলস লিমিটেডের (ইউনিট-২) ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, দেশের উন্নয়নে সরকার বিনিয়োগে নজর দিয়েছে। এক্ষেত্রে সরকার সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতাও দিয়ে যাচ্ছে। কারণ ১৬ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এবং মাথাপিছু আয় ৫-৭ হাজার ডলারে উন্নীত করতে বিনিয়োগের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, আমাদের শ্রমশক্তি আছে। এদেরকে কাজে লাগাতে হবে। বাড়াতে হবে এদের আয়। আয় বাড়লে সরকারকে তারা বেশি কর দিতে পারবে। এ সময় পণ্যমূল্য নিয়ে তিনি বলেন, জিনিসপত্রের দাম কত বাড়ল, সেটি বড় বিষয় নয়। বড় বিষয় হল মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আছে কিনা। এজন্য মানুষের আয় বাড়াতে জোর দিতে হবে।

এলাকাবাসীর পাশে থেকে কাজ করাই কর্তব্য : ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর নবাবগঞ্জ উপজেলার চুড়াইন মুন্সীনগর মাঠে প্রগতি সংঘ ক্লাবের নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম। এ সময় তিনি বলেন, এলাকাবাসীর পাশে থেকে কাজ করাই আমার কর্তব্য। এখানে আমি ছোট থেকে বড় হয়েছি। জীবনের অনেক স্মৃতি আজও মনে পড়ে। তাই আমার গ্রাম ও দোহার-নবাবগঞ্জের মানুষের জন্য যে কোনো ভালো কাজে আমি সর্বদা সহযোগিতা করব। আল্লাহ আমাদের অনেক ভালো রেখেছেন। এখন মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চাই। মানুষের জন্য কাজের মধ্যে আমি তৃপ্তি খুঁজে পাই।
সাহসের সঙ্গে সত্য প্রকাশ করতে হবে : ২০১৬ সালের ২২ মে যুগান্তরের ঢাকা বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে নুরুল ইসলাম বলেন, ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে সাহসের সঙ্গে সত্য প্রকাশ করতে হবে। সৎপথে থেকে সাহসিকতার সঙ্গে সাংবাদিকতা করতে হবে। তিনি বলেন, সত্য প্রকাশে আমরা কারও কাছে মাথা নত করব না। ১৭ বছর ধরে একমাত্র আমরাই জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ও সাহসী সংবাদ পরিবেশন করে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছি। আমার ওপর অনেক ঝড় এসেছে, আঘাত এসেছে, কিন্তু পিছপা হইনি। যমুনা টিভির জন্য ১২ বছর আইনি লড়াই করেছি। আমাদের আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হয়েছে। তবে মনে সাহস ছিল, আমার কোনো দুর্বলতা নেই। তিনি বলেন, আমি নিজে দুর্নীতি করি না। তাই আপনারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত হাতে কলম ধরবেন। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি।

শ্রদ্ধাবোধ বাড়াতে হবে : ২০১৬ সালের ২৬ নভেম্বর গুলশান হেলথ ক্লাবের ৫ম বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, জীবনমান উন্নয়নে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বাড়াতে হবে। তিনি বলেন- সমাজ, পরিবার এমনকি জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সম্মান জানাতে হবে। মনে রাখতে হবে, একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসার মধ্য দিয়ে একটি সুন্দর সমাজ, একটি সুন্দর পরিবার গড়ে ওঠে। তাই আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে এই বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে।

খেলাধুলা মানসিক বিকাশ ঘটায় : যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ২০১৫ সালের ২৩ জুলাই ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার চুড়াইনের আকারবাগ মাঠে মুন্সীনগর প্রগতি সংঘের আয়োজনে চূড়ান্ত ফুটবল প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি ছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে বলেন, খেলাধুলা মানসিক বিকাশ ঘটায় এবং মানুষকে অপরাধপ্রবণতা থেকে বিরত রাখে। সমাজের উন্নয়নে খেলোয়াড়রাও অর্থনৈতিকভাবে ভূমিকা রাখতে পারেন। তিনি বলেন, আমার এলাকার দরিদ্র ও দুস্থ পরিবারের সন্তানদের যাতে অর্থের অভাবে লেখাপড়া বন্ধ না হয়, সে বিষয়ে আমি সর্বদা সজাগ থাকব।