হাজারও সংবাদকর্মীর হৃদয়ে আলোকবর্তিকা হয়ে সমুজ্জ্বল থাকবেন তিনি
আলাউদ্দিন আহমেদ
দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগ্রুপ এবং দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টিভির প্রতিষ্ঠাতা সদ্য প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম ছিলেন শেকড়ে কর্মরত অনেক সাংবাদিকের কাছে শ্রদ্ধাভাজন এক ব্যক্তিত্ব।
শুধু যুগান্তর-যমুনা টিভি নয়; তার জনপ্রিয়তা ছিল মাঠ পর্যায়ে প্রকাশিত অনেক আঞ্চলিক ও জাতীয় পত্রিকার সংবাদকর্মীদের মধ্যেও।
প্রকাশনার শুরু থেকেই আমার সুযোগ হয়েছে যুগান্তরের একজন প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার। মনে আছে, প্রথমদিকে ঢাকা অফিসে প্রতিনিধি সম্মেলনে শ্রদ্ধাভাজন চেয়ারম্যান স্যার বলেছিলেন, ‘যুগান্তর তাই বলবে, যা অন্যরা বলেনি।’
টিভি চ্যানেল সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, ‘মুখে ক্রিম মাখলেও যে ক্যান্সার হতে পারে, সেটা আমরা দেখাতে চাই।’ এসব কথা তিনি বলেছিলেন অসততা, ভেজাল, দুর্নীতি ইত্যাদি অপকর্মের বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে জাগরণ তৈরি করতে যুগান্তর ও যমুনা টিভি শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে, সেই আত্মবিশ্বাসে।
ভাবতে গর্ব হয়, যুগান্তর ও যমুনা টিভি শুরু থেকেই সে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। অনেক বড় বড় দুর্নীতিবাজের মুখোশ উন্মোচনে এ দুটি মিডিয়া যথাযথ দায়িত্ব পালন করে চলেছে। বস্তুত দেশজুড়ে যুগান্তরের প্রতিনিধি বাছাই প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট দূরদর্শিতা ছিল। অভিজ্ঞদের নেয়া হয়েছিল। প্রতিনিধি সমাবেশে মাননীয় চেয়ারম্যান স্যারের আহ্বান ও দিকনির্দেশনা নিয়ে শেকড়ের প্রতিনিধিরা কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, যা এখনও চলমান।
আশার কথা, চলমান বৈশ্বিক সমস্যা কোভিড ১৯-এর প্রভাবে দেশের মিডিয়া সেক্টরে অনেক ওলটপালট হলেও যুগান্তর-যমুনায় তেমন কোনো নেতিবাচক পরিবর্তন হতে দেননি এ দুই প্রতিষ্ঠানের স্বপ্নদ্রষ্টা চেয়ারম্যান স্যার। এজন্য তার প্রতি আমরা শুধু কৃতজ্ঞই নই; বরং অন্য মিডিয়া হাউসের জন্যও এটি একটি ভালো উদাহরণ। তার গড়ে তোলা একচল্লিশটি প্রতিষ্ঠানে প্রায় হাজার হাজার মানুষ কর্মরত রয়েছে।
দেশের অর্থনীতিতে নিঃসন্দেহে এটি বিরাট এক শক্তি হিসেবে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। তিনি বিদেশে ব্যবসার চিন্তা করেননি, অর্থও পাচার করেননি। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি দেশের প্রতি তার দায়িত্ব ও কর্তব্য আমৃত্যু আন্তরিকভাবে পালন করে গেছেন। এগুলোও মফস্বলের মিডিয়াকর্মীদের অনুপ্রাণিত করে, তার প্রতি শ্রদ্ধা বাড়ায়।
গর্বের বিষয় হল, তার গড়া যুগান্তরের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কখনই মাঠে কাজ করা প্রতিনিধিদের মফস্বল কর্মী হিসেবে বিবেচনা করেনি; যুগান্তর প্রতিনিধি হিসেবে সমমর্যাদায় মূল্যায়ন করেছে। বিষয়টি এ পত্রিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কাজের গতি যেমন বাড়িয়েছে; তেমনি সবাই মনেপ্রাণে এ পত্রিকাকে নিজের বলে আপন করে নিয়েছে এবং নিজেকে বিশাল যমুনা গ্রুপের ‘একজন হৃদয়বান মানুষের’ কাছের মানুষ হিসেবে ভাবতে শিখেছে।
শ্রদ্ধাভাজন এই বড় মনের মানুষটির প্রয়াণে সব সময় মনে হয়, আমরা আমাদের অভিভাবককে হারিয়ে ফেললাম। তার শূন্যস্থান হয়তো কখনই পূরণ হবে না; তারপরও তার রেখে যাওয়া যুগান্তর-যমুনা টিভির মাধ্যমে হাজারও সংবাদকর্মীর হৃদয়ে আলোকবর্তিকা হয়ে তিনি সমুজ্জ্বল থাকবেন। আমরা তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।
লেখক : যুগান্তর প্রতিনিধি ও ঈশ্বরদী প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি
লেখক : যুগান্তর প্রতিনিধি ও ঈশ্বরদী প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি